577238 330226900408128 130263308 n

577238 330226900408128 130263308 n -

tweet this

URL:

Part of the album by

এমন শাস্তি দেব যাতে আর কেউ হামলা করার সাহস না পায়
রামু উখিয়া পটিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
উত্তম চক্রবর্তী, কক্সবাজার (রামু) থেকে ফিরে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের যে কোন অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের কোন অপচেষ্টা সহ্য করা হবে না। রামু, উখিয়াসহ বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির-উপাসনালয়ে হামলাকারীদের দ্রুত বিচার আইনে এনে এমন শাস্তি দেয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের হামলার সাহস না পায়। আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, সুনাম বাড়ছে- ঠিক তখনই একটি মহল এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। নানা হীন কর্মকা- ঘটিয়ে দেশকে পিছিয়ে দিতে চাইছে। এসব অপতৎপরতা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না।
হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে গোপনে বা প্রত্যেক্ষভাবে তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য রামু ও উখিয়াবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে একটি শক্তিশালী ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা কমিটি’ গঠন করুন। বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) বলেন আওয়ামী লীগ নাকি এই হামলা করেছে। কিন্তু এখানে এসে সব ঘটনা শোনার পর এটি স্পষ্ট কারা এর সঙ্গে জড়িত। আর বিরোধীদলীয় নেত্রীও সব জানেন। আমরা চাই না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে এ ধরণের ঘটনা আর ঘটুক। এজন্য সারাদেশেই জনগণকে সম্পৃক্ত করে এসব অপতৎপরতা মোকাবেলা করতে হবে।
সোমবার কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সাম্প্রদায়িক উগ্র গোষ্ঠীর নগ্ন হামলায় ভস্মীভূত-ল-ভ- হয়ে যাওয়া একাধিক বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয় পরিদর্শন শেষে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাসের পাশাপাশি এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রায় পৌনে চার কোটি নগদ অর্থের চেকসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী এই হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই এলাকার তাঁরই এমপি লুৎফর রহমান কাজলের নেপথ্যের ঘটনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হামলার ঘটনার আগে যখন স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিল, জনগণকে শান্ত করছিল, ঠিক তখন স্থানীয় বিএনপির এমপি এসে কী উস্কানি দিয়ে গেলেন? ওই এমপি আধঘণ্টা থেকে এলাকা ত্যাগের পরপরই হাজার হাজার লোক একযোগে হামলা চালাল, জ্বালাও-পোড়াও শুরু হলো। বিএনপির সেই এমপি কী বলে গেলেন, কী উস্কানি দিলেন তার জবাব একদিক তাঁকে দিতেই হবে। আর আওয়ামী লীগ কখনই মানুষের অকল্যাণ চায় না, বিশ্বাসও করে না।

ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক প্রধানমন্ত্রী
বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার যান। সেখান থেকে সড়কপথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে পৌঁছেন সাম্প্রদায়িক উগ্র গোষ্ঠীর হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া রামু উপজেলায়। প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই রামু কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেন। ভয়াল এই তা-ব ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি। বিশাল এই বৌদ্ধ বিহারের যেন কোন চিহ্নই নেই। সবকিছু পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয়েছে। এমনকি শত বছরের পুরনো স্বর্ণখচিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তি শুধু ক্ষতবিক্ষতই করা হয়নি, তাঁর চোখের দামী পাথর পর্যন্ত তুলে লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। এই বৌদ্ধ বিহারের অধিকাংশ দামি জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা।
রামু উপজেলায় এই বৌদ্ধ বিহারে যাওয়ার দীর্ঘ পথের দু’ধারে যেদিকে চোখ যায় শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কোন বাসাবাড়িই অক্ষত নেই। সবকিছুই পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। বসতবাড়িসহ সবকিছু হারিয়ে শত শত সংখ্যালঘু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির নির্মিত অস্থায়ী তাঁবুতে। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে সবাই যেন আতঙ্ক কাটিয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়া বৌদ্ধ ভিক্ষু ও মা-বোনদের সান্ত¡না দিতে শেখ হাসিনাও তাঁর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। শোক কাটিয়ে সবার কণ্ঠে ছিল এক দাবি জড়িত নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
রামু সীমা বৌদ্ধ বিহার ঘুরে ঘুরে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের তা-ব প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান তিন ধর্মগুরু শুদ্ধানন্দ মহাথের, সত্যপ্রিয় মহাথের ও ধর্মসেন মহাথেরর সঙ্গে একান্ত কিছু সময় বৈঠক করেন। তিনি ওই ধর্মগুরুর কাছ থেকে সবকিছু অবগত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে ধ্বংসপ্রাপ্ত চেরাংঘাটা রাখাইন বৌদ্ধ বিহার, উ-মংরি বৌদ্ধ বিহার (লাল চিং), উ-মংরি বৌদ্ধ বিহার (সাদা চিং), রামু মৈত্রী বিহার ও অপর্ণা বৌদ্ধ বিহার হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখেন। এসব বৌদ্ধ বিহারের কোনকিছুই অক্ষত নেই। বিহারগুলো এমনভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে এখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল বলে মনেই হয় না। সবকিছু পুরিয়ে ছাই করে ফেলা হয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মূর্তি, পুরাকৃতি, সুদৃশ্য মন্দিরের ব্যবহার্য কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। সবকিছু পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আগুনের লেলিহান শিখা শুধু বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেনি, মন্দিরের ভেতরে থাকা সব গাছপালাও পুড়ে গেছে। আর লুটপাটের চিত্র ছিল সর্বত্রই।
প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় এই সফরে ছিল না কোন আনুষ্ঠানিকতা। ছিল না কোন দলীয় জনসভার আয়োজন। ছিল না কোন ছবি, পোস্টার কিংবা তোরণ। ধ্বংসযজ্ঞ বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনের পর রামু খিজরি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি ছোট মঞ্চে শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে অসাম্প্রদায়িক তাঁর বহির্প্রকাশ ঘটে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়েছেন এই তা-বের সঙ্গে জড়িত সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে। বিশাল মাঠের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পুরো মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের সড়কগুলো লোকেলোকারণ্য হয়ে পড়লে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই অনুষ্ঠানটি রীতিমতো বিশাল জনসভায় রূপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেষ করেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সাহায্যের চেক বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসহ অন্যান্য খাত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার সংস্কার, বসতবাড়ি নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ ৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার টাকার চেক, গৃহনির্মাণে ৩০৭ বান টিন, ৩৬ মেট্রিক টন চাল, ২৪৬ পিস কম্বলসহ কাপড়, বইপত্র বিতরণ করেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাঝে চীবর দান করেন।

সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন
প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এখানে এসেছি। আমি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি। ইসলাম শান্তির কথা বলে। নবী করিম (সা) বলেছেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ইসলাম অন্যের ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ, আঘাত করা, উপাসনালয় জ্বালাও-পোড়াও এসব সহ্য করে না। তিনি বলেন, যারা এ জঘন্য হামলা চালিয়েছে তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে না। শুধু ইসলাম নয়, তারা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না, মানবতায় বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, আমি ঘুরে ঘুরে ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছি। টেকনোলজি ভাল, কিন্তু টেকনোলজি ব্যবহার করে যে উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা কারোরই কাম্য নয়। বাংলাদেশে সব ধর্মের সমান অধিকার রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সবার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। অবশ্যই তাদের গ্রেফতার করা হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বৌদ্ধদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ধ্বংস করা হয়েছে। এটা শুধু বৌদ্ধ ধর্মেরই নয়, এসব দেশেরও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যারা এ দেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেন, অসাম্প্রদায়িক সমাজে বিশ্বাস করেন, দেশের এমন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা রামুতে আজ উপস্থিত হয়েছেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে অনেকেই আমাকে বলেছে যে, যারা এ ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে এখানে আর্মি-বিজিবি কতদিন থাকবে? এই ধরনের হুমকি কারা দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের হুমকি কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ভয়াবহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিতে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আমরা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট হীন কর্মকান্ড ঘটিয়ে দেশকে তারা আবার পিছিয়ে দিতে চায়। তারা মানুষের উন্নতি, কল্যাণ সহ্য করতে পারছে না। ক্ষমতায় থেকে জনগণের অর্থসম্পদ লুটেপুটে খেতে পারছে না বলেই এসব ষড়যন্ত্র করছে।
‘আওয়ামী লীগ চোর ও দুর্নীতিবাজ’ বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মুখে এমন কথা শুনলে হাসি পায়। তাঁর কথা শুনলে মনে হয়- ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। যিনি ক্ষমতায় থাকতে বার বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, নিজে দুর্নীতি করেছেন, যাঁর ছেলেরা দুর্নীতির টাকা নিয়ে দেশে-বিদেশে ধরা পড়েছে, তাঁরা আজ বড় বড় কথা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন! আমরা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখনই তাদের এত মাথাব্যথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা সংবিধান সংশোধন করে সব ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছি। কারোর ধর্মের ওপর কোন আঘাত না আসে সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারোর প্ররোচনায় অন্য ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত না করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, কেউ উস্কানিমূলক কোন কাজ করলে তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের বলি এখানে ধর্মীয় উন্মাদনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এই ইস্যুতে মুসলিম ভাইয়েরা যারা অন্য দেশে সংখ্যালঘু হিসেবে রয়েছেন তারাও অত্যাচারিত হতে পারেন। এ কথা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সব ধর্মের মানুষদের প্রতি আমার আহ্বান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজাই রাখুন, তাহলে দেশের উন্নয়ন আসবে।
ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করব। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যারা হামলা করেছে তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে।
শোকাহত হাজার হাজার মানুষের সামনে ওই দিনের বর্বরোচিত হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার আবেগে জড়িয়ে পড়েন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু ও সীমা বৌদ্ধ বিহারের প্রধান সত্যপ্রিয় মহাথেরো। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজ আসন ছেড়ে মাইকের সামনে এসে অশীতিপর এই ধর্মগুরুকে সান্ত¡না দেন।
সত্যপ্রিয় মহাথেরো বিশাল এই ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন আমাদের সাহস যোগাবে। আমাদের সর্বস্ব ধ্বংস করা হয়েছে। এই তা-বে আমরা হতবাক। আমাদের কিছুই বলার নেই। ১৯৭১ সালে এই বৌদ্ধ বিহারে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সবাইকে আশ্রয় দিয়েছি। ৮৩ বছর ধরে আমি এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করে আসছি। কিন্তু জীবনসায়াহ্নে এসে আমাকে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার মুখে পড়তে হলো, যা সহ্য করার মতো নয়। এসব বৌদ্ধ বিহারে হাজার বছরের ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি ছিল, যার সবকিছুই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বৌদ্ধ বিহারের ঐতিহ্য সংরক্ষণে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানালে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেন।
কক্সবাজার জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি আলহাজ মাওলানা সালাউদ্দিন মোহাম্মদ তারেক বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্ম সব সময় শান্তির কথা বলে। ধর্মের কোথাও কোন ভেদাভেদ করা হয়নি, অন্যের ধর্মের ওপর আঘাত ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলামের আইন বিকৃত করার ফলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় থেকে রামুর ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে আসেন আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, গণঐক্যের আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিক, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি হাজী আবদুস সামাদ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, নাঈমুল ইসলাম খান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম শাকিল।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রামুতে আগে থেকেই অবস্থান করে সবকিছু তদারকি করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর এমপি, এনামুল হক শামীম, আমিনুল ইসলাম আমিন, মোল্লা মোঃ আবু কাউছার, পংকজ দেবনাথ, এথিন রাখাইন এমপি, এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, শাহাজাদা মহিউদ্দিন, অশোক বড়ুয়া, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ অন্য নেতারা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
কক্সবাজার সার্কিট হাউসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার। ভবিষ্যতে দেশে আর এই ধরনের কোন ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলার পর বিরোধীদলীয় নেতার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বললেন, ‘আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে।’ ঘটনা ঘটিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় তারা পারদর্শী। তিনি বলেন, বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত- সে যে ধর্মেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকেও সকল ধর্মের লোকদের নিয়ে কমিটি করার তাগিদ দেন তিনি। রামুর ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাহস নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শেখ হাসিনা তাদের অভিনন্দন জানান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিভিন্ন তদন্তে ও ভিডিওফুটেজেই পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা এই জঘন্য হামলার সঙ্গে জড়িত। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যাতে আর কেউ এমন নারকীয় তা-ব চালানোর সাহস না পায়।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতেই ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর সামনে তুলে ধরেন রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রামু উপজেলার চেয়ারম্যান সোহেল সারোয়ার কাজল। কাজল বলেন, আমরা যখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে নিয়ে এসেছি, তখন বিএনপির স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল এলেন। তিনি এসে আমাদের মঞ্চে উঠলেন এবং উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বললেন, ‘আমি রাজনীতি করতে আসিনি। আমি আপনাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে এসেছি।’ এরপর, তিনি চলে গেলেন। তারপরই দেখতে পেলাম পূর্ব দিকের আকাশ লাল।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহম্মদ হোসেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, উখিয়া আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি নাইমুল হক টুটুল, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী এবং ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা হাজী বশিরুল আলম এই বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক
এর আগে একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক এই হামলার ঘটনা নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে আগামীতে বৌদ্ধ বিহারের হামলার মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীতে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।
২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বৌদ্ধ বিহারের হামলার ঘটনাকে সুপরিকল্পিত হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। সামনে ঈদ-উল-আযহা এবং দুর্গা পুজোকে সামনে রেখে সকল ধর্মের লোকদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কমিটি করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে অনেক খেলা হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।
এর আগে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ সিরাজুল হক খান, কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ্র ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এবং প্রসাশনের পক্ষ থেকে ওই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা তুলে ধরেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে। 

 

Free High Quality Photo Upload and Sharing


Upload » Sign Up! Learn More